ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান কিরিলো বুদানভ বলছেন, রাজধানী কিয়েভসহ প্রধান শহরগুলো দখলে নিয়ে তার দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়ে রাশিয়া এখন ইউক্রেনে ‘উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করতে চাইছে।

কিরিলো বুদানভের ভাষায়, ভ্লাদিমির পুতিন ‘পুরো ইউক্রেনকে গিলতে পারবেন না’, তাই তিনি পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল এবং দেশটির বাকি অংশের মাঝখানে একটা বিভক্তি রেখা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।খবর বিবিসির

তার মতে, রুশ অগ্রাভিযান স্থবির হয়ে পড়ার পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অগ্রাধিকার হচ্ছে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাংশ।

তিনি যদি এই অঞ্চলটাকে সংযুক্ত করতে পারেন, তা হলে একে ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে মস্কো-নিয়ন্ত্রিত একটি অঞ্চল সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবেন— অনেকটা কোরিয়া যুদ্ধের পর যেমন হয়েছিল।

জেনারেল বুদানভ বলেন, এ রকম কোনো রাষ্ট্র স্থাপনের চেষ্টা টেকসই হবে না। কারণ স্থানীয় জনগণ একে প্রতিহত করবে। তিনি আরও বলেন, তার দেশ শিগগিরই রুশ-অধিকৃত এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করবে।

তিনি বলেন, রাশিয়ার আসল সমস্যা হচ্ছে— পূর্বাঞ্চল ও ক্রাইমিয়ার মধ্যে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠা ও চালু রাখা। তবে এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মারিওপোল, যাকে কোনো রকমেই ভাঙা যাচ্ছে না।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ বলছে, রাশিয়া-সমর্থিত স্বঘোষিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকে খুব শিগগির রাশিয়ায় যোগদানের প্রশ্নে একটি গণভোট হতে পারে।

বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা লিওনিদ পাসেচনিক এ কথা বলেছেন। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল দুটি ২০১৪ সালেই স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং তখন থেকেই সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা চলছিল।

এ বছরই ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া তাদের স্বীকৃতি দেয় এবং তার দুদিনের মধ্যেই সেখানকার জনগণকে রক্ষার কারণ দেখিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের ভাষায় ‘বিশেষ সামরিক কার্যক্রম’ শুরু করে।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত এলাকায় কোনো গণভোট করলে তা বাতিল হয়ে যাবে।

এর মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে সিনিয়র মানবাধিকার কর্মকর্তা লুদমিলা দেনিসোভা বলছেন, রাশিয়ার দখল করে নেওয়া একমাত্র বৃহৎ ইউক্রেনীয় শহর খেরসনেও স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি গণভোট করার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া এবং সেখানে তারা নিজস্ব মুদ্রা রুবল চালু করতে চাইছে।

রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু আছে, যেগুলো ঘনবসতিপূর্ণ বেসামরিক এলাকা।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, রুশ বিমানকে যেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে না হয়, সে জন্য রাশিয়া তাদের নিজ আকাশসীমার ভেতর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলছে, দক্ষিণ-পূর্বের মারিওপোল শহরের বেসামরিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর রাশিয়া আরও আক্রমণ চালিয়েছে।

এ ছাড়া রাজধানী কিয়েভের ওপরও আক্রমণ হচ্ছে। শহরটির ভেতরে এবং উপকণ্ঠে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা তার দেশকে যুদ্ধবিমান ট্যাংক এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা সরবরাহ করে। তিনি বলেন, মেশিনগান দিয়ে রুশ বিমান ভূপাতিত করা যায় না।

 

 

কলমকথা/ বিথী